যে যন্ত্র কেনা হচ্ছে, তা দিয়ে দেশের যেকোনো স্থানে ভয়েস এবং ইন্টারনেট সেবার মান তাৎক্ষণিকভাবে যাচাই করতে পারবে বিটিআরসি।
তদারকি করার যন্ত্র দিয়ে মোবাইল ফোন অপারেটররা অনুমোদিত কলচার্জ প্রয়োগ করছে কি না, গ্রাহকের টাকা যথাযথভাবে কেটে রাখছে কি না, তা–ও যাচাই করা সম্ভব হবে।
মোবাইল ফোন অপারেটরদের কাছ থেকে রাজস্ব আদায়ে স্বচ্ছতা আনতে যন্ত্র ব্যবহার করবে সরকার। অপারেটরদের নতুন ধরনের প্রযুক্তির আওতায় এনে কাজটি করা হবে। এ জন্য ৭৭ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রযুক্তিযন্ত্র কিনবে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। ওই যন্ত্র কেনার একটি প্রস্তাব গতকাল বুধবার অনুমোদন করেছে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কমিটির অনলাইন সভায় এ অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘প্রকিউরমেন্ট অব ডিজাইন, ডেভেলপমেন্ট, সাপ্লাই, ইনস্টলেশন, টেস্টিং অ্যান্ড কমিশনিং অব টেলিকম মনিটরিং সিস্টেম ফর দ্য টেলিকম নেটওয়ার্কস সিস্টেমস অব বাংলাদেশ’ প্রকল্পের আওতায় এই পণ্য কেনা হবে। সরবরাহ করবে কানাডার প্রতিষ্ঠান টিকেসি টেলিকম ইনকরপোরেশন। অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের এখন ডিজিটাল তদারকি ব্যবস্থা দরকার। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও ভালো প্রকল্প।’
জানা গেছে, দেশের যেকোনো স্থানে ভয়েস এবং ইন্টারনেট সেবার মান তাৎক্ষণিকভাবে যাচাই করা যাবে এই যন্ত্রের মাধ্যমে। মোবাইল ফোন অপারেটররা অনুমোদিত কলচার্জ প্রয়োগ করছে কি না, গ্রাহকের টাকা যথাযথভাবে কেটে রাখছে কি না, তাও– যাচাই করা সম্ভব হবে।
এ বিষয়ে বিশদ জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. সামসুল আরেফিনের কাছ থেকে জেনে নেওয়ার পরামর্শ দেন। সামসুল আরেফিন বলেন, টেলিফোন অপারেটররা যে রাজস্বটা আদায় করে, সে ক্ষেত্রে অনেক সময় সঠিক তথ্য না–ও থাকতে পারে। এ জন্য এই তদারকি পদ্ধতির মাধ্যমে শতভাগ রাজস্ব আদায় সম্ভব হবে। তদারকি ব্যবস্থাটি রাজস্ব আদায়ের অনিয়ম রোধে চালু করা হবে বলেও জানান অতিরিক্ত সচিব।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে শ্রীলঙ্কাকে ২০ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্তবিষয়ক এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যেমন ঋণ নিতে পারি, তেমনি দিতেও পারি। এই টাকা দিয়ে যদি বাড়তি কোনো লাভ পাই এবং প্রতিবেশী দেশকে সহযোগিতা করতে পারি, সেটা তো ভালো।’
নতুন করে ছয় হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণ বাড়ার কারণ জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী পাল্টা প্রশ্নে বলেন, ‘আগে কত ছিল, এখন কত? বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণখেলাপির বিষয়ে কীভাবে কাজ করেছে, সেটা আগে দেখব। আজকেই দেখব। এরপর বলা যাবে।’
অনলাইনে মোটরযানের কর ও মাশুল আদায়ের সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান নিয়োগের একটি প্রস্তাবও অনুমোদিত হয়েছে গতকালের ক্রয় কমিটিতে। পাঁচ বছরের জন্য ২১৮ কোটি ৭১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ের এ কাজ পেয়েছে আলোচিত কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেমস (সিএনএস)।
অতিরিক্ত সচিব সামসুল আরেফিন এ ব্যাপারে বলেন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) অনলাইন ব্যাংকিং ব্যবস্থায় মোটরযানের কর ও মাশুল আদায়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান সিএনএস।
এদিকে, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) যাত্রীবাহী নৌযান কেনার একটি প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে। সামসুল আরেফিন জানান, চট্টগ্রামের কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্স লিমিটেডের কাছ থেকে ২৩১ কোটি ১৪ লাখ টাকায় তিনটি প্যাসেঞ্জার ক্রুজ ভ্যাসেল (যাত্রীবাহী নৌযান) কেনা হবে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের চীনের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংস্থা চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেডের সঙ্গে স্বাক্ষরিত বাণিজ্যিক চুক্তির ৯টি শর্ত পরিবর্তনের প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বৈঠকে।
কী পরিবর্তন হয়েছে—এমন প্রশ্নের জবাব দিতে না পেরে সামসুল আরেফিন প্রথমে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে বিশদ শুনে নেওয়ার পরামর্শ দেন। পরে আবার বলেন, মূল চুক্তিপত্রে কোনো পরিবর্তন হবে না। কিছু কাজ যা ওই কোম্পানি করত, তা বর্তমানে প্রকল্প থেকেই করা হবে।
অনুমোদিত আরও প্রস্তাব
বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনকে ৩০ হাজার টন ইউরিয়া সার কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড থেকে ৮৭ কোটি ৬৪ লাখ টাকায় এই সার কেনা হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান এক্সিলারেট এনার্জি থেকে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) ৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ এলএনজি কেনার একটি প্রস্তাবও অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এতে ব্যয় হবে ৩১৩ কোটি ৬৯ লাখ টাকা।
অতিরিক্ত সচিব জানান, বিপিসি ১২ লাখ ৩৫ হাজার টন পরিশোধিত জ্বালানি তেল ৫ হাজার ৭৭৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকায় আমদানি করবে। পাঁচটি প্যাকেজের আওতায় সিঙ্গাপুরের চারটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে এই তেল কেনা হবে।