logo
Sunday , 20 December 2020
  1. সকল নিউজ

বিএনপিকে নষ্ট করেছে জামায়াত

প্রতিবেদক
admin
December 20, 2020 9:31 am

নিউজ ডেস্ক: বিএনপির নেতাকর্মীদের অনেকেই অভিযোগ করে আসছিলেন যে, ‘জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে রাজনৈতিক জোট গঠন করার মধ্য দিয়েই বিএনপিকে নষ্ট করা হয়েছে।’

বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল নেতা জানান, ‘জামায়াতে ইসলামীকে যুক্ত করা হয়েছিল দুইজন ব্যক্তির তৎপরতায়। এখন দুজনেই প্রয়াত। তারা হলেন— সাবেক প্রধানমন্ত্রী কাজী জাফর আহমেদ এবং সাংবাদিক-রাজনীতিক আনোয়ার জাহিদ। এই দুজনের তৎপরতায় জামায়াত ক্রমশ বিএনপির নিকটে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে।’

কাজী জাফরের একজন ঘনিষ্ঠ আত্মীয় দাবি করেন, ১৯৯৯ সালে জোট গঠনের আগে প্রায়শই খালেদা জিয়ার বাসায় জামায়াতের কয়েকজন শীর্ষ নেতার যাতায়াত ছিল। কাজী জাফর ওই নেতাদেরকে তার আত্মীয় বলে খালেদা জিয়ার বাসায় নিয়ে যেতেন। একই সময়ে আনোয়ার জাহিদের প্রচেষ্টাও ছিল উল্লেখযোগ্য। কাজী জাফরের ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক কর্মী জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার সূত্রে জানা যায়, চার দলীয় জোট গঠনে কাজী জাফরের অবদান ছিল অনেক বেশি।

চার দলীয় জোট গঠনের পর ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসে বিএনপি। সরকার গঠনে যুক্ত করে জামায়াতকেও। বিএনপির অনেক নেতার উপলব্ধি— জামায়াতকে আন্দোলনের পাশাপাশি সরকারে যুক্ত করা ছিল রাজনৈতিক ভুল সিদ্ধান্ত।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির দুই সদস্যের ভাষ্য— সরকার গঠনের পর বেগম জিয়ার মন্ত্রিসভার ‘কিচেন কেবিনেট’ হয়ে যায় ‘পাকিস্তানপন্থীদের’ কেবিনেট। চার দলীয় জোট সরকারে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর কিচেন কেবিনেটে সে সময় বিএনপির সাইফুর রহমান, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আবদুল মান্নান ভূঁইয়া, জামায়াতের মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও প্রধানমন্ত্রীর সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী জায়গা পান। এর মধ্যে নিজামী, মুজাহিদ ও সাকা চৌধুরীর ফাঁসি কার্যকর হয়েছে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে।

স্থায়ী কমিটির দুইজন সদস্য বলছেন, কিচেন কেবিনেটে সাইফুর রহমান ও মান্নান ভূঁইয়ার হোসেনের দ্বন্দ্ব ছিল। সংসদে উপনেতা হওয়ার লড়াইয়ে তাদের দ্বৈরথ ছিল তুঙ্গে। একই সঙ্গে তাদের বিরোধে কেএম ওবায়দুর রহমান উপনেতা হতে পারেননি। একই সঙ্গে তৎকালীন মহাসচিব মান্নান ভূঁইয়ার সঙ্গে বিরোধ ছিল ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের। এই বিরোধ দেখা দেয় ১৯৯৬ সালে সংসদ নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর থেকে। মোশাররফ হোসেন মহাসচিব হওয়ার দৌড়ে ছিলেন। ফলে মান্নান ভূঁইয়া মহাসচিব হলেও বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতাদের বিরোধ ছিল প্রবল। ওই সংসদে বিএনপি পাঁচ বছর কোনও উপনেতা নির্বাচন করেনি।

ওই সময় তৎকালীন মহাসচিব মান্নান ভূঁইয়া নিজের দিক বিবেচনা করতে গিয়ে তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরকে গেটওয়ে হিসেবে কাজে লাগান। বিএনপি নেতাদের এই বিরোধ, কিচেন কেবিনেটে জামায়াত নেতাদের শক্ত অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার ও দল পরিচালনায় বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে তৎকালীন বিএনপির সরকার।

স্থায়ী কমিটির দুই প্রবীণ সদস্য মনে করেন, ওই সময় জামায়াতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার ফল স্বরূপ মুক্তিযুদ্ধের মূল স্পিরিট ও গুণগত পরিবর্তনের পথ থেকে সরে যায় বিএনপি। জঙ্গি বাংলা ভাই, শায়খ আবদুর রহমান ইস্যুতে বিএনপির হাইকমান্ডের তৎকালীন অবস্থান ছিল নিষ্ক্রিয়। উল্টো ‘বাংলা ভাই মিডিয়ার সৃ্ষ্টি’ উল্লেখ করে বিতর্ক সৃষ্টি করেন ওই সরকারের মন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামী।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, দলের প্রথম কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার মনে করেন, ‘জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির প্রথম সখ্যতা তৈরি হয় ১৯৯১ সালে সরকার গঠনের সময়। ১৭টি আসন পেয়ে বিএনপিকে সমর্থন করার পরই দলের হাইকমান্ড তাদেরকে আস্থায় নেয়।’

জমির উদ্দিন সরকারের এমন ভাষ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির দুই সদস্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তাদের মন্তব্য— ‘ওই সময় রাশেদ খান মেননদের সমর্থন গ্রহণ করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। তৎকালীন বিএনপি নেতা বি চৌধুরীর বাসায় সরকার গঠনে সমর্থন দেয়ার বিষয়ে অনেকটাই অগ্রগতি হয়। যদিও ওই সময় বিএনপির তিন প্রভাবশালী কট্টর ডানপন্থী নেতার উদ্যোগ ও আগ্রহে শেষ পর্যন্ত জামায়াতের সমর্থন গ্রহণ করেন খালেদা জিয়া।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির প্রবীণ এক সদস্য জানান, ‘বিএনপিতে ওই সময় তিন জন প্রভাবশালী ডানপন্থী নেতা আবদুস সালাম তালুকদার, আব্দুল মতিন চৌধুরী, ও মোস্তাফিজুর রহমানের কারণে জামায়াতের সমর্থন নেন খালেদা জিয়া। ওই সময় বি চৌধুরী, মাজেদুল ইসলাম, শওকত আলী, শেখ রাজ্জাক আলীসহ কয়েকজন নেতা এই উদ্যোগের বিরুদ্ধে থাকলেও প্রভাবশালী ওই তিন নেতার কৌশলের কারণে তারা বেগম জিয়াকে বিষয়টি বুঝাতে ব্যর্থ হন।’

এদিকে, দুই দশক পর বিএনপির সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগের বিষয়ে বিএনপি-জামায়াতের রয়েছে দুই অবস্থান। বিএনপি ও জামায়াত— উভয়ের কেউই নিজে থেকে সম্পর্কের ইতি টানতে চাইছে না। দুই দলের নেতারাই বলছেন, ‘আমরা ছাড়বো না, তাদের ছাড়তে হবে। ২১ বছরের সম্পর্কের সমাপ্তি খুব সহজেই ঘটবে, এমনটি মনে করছেন না নেতারা।’

বিএনপির সঙ্গে জামায়াতকে রাখার পক্ষে জোরালো অবস্থান সব সময়ই ছিল ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকারের। তিনি বলেন, ‘আমরা নিজেরা কেন ছাড়বো। তারা ছাড়ুক।’

বিএনপি জোট ছেড়ে দিচ্ছে জামায়াত, এমন প্রশ্নে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, ‘জামায়াতের চিন্তা-ভাবনা এ রকমই। বিএনপি জোটকে নিষ্ক্রিয় করে রেখেছে। তবে মজলিসে শুরা থেকে এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।’

জামায়াতের নায়েবে আমির মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, ‘জোট তো গোপনে ভেঙে দেয়ার কিছু নেই। জোট ছাড়লে আমরা প্রকাশ্যই জানাবো।’

সর্বশেষ - সকল নিউজ